ডায়াবেটিস গত কয়েক হাজার বছর ধরে মানবজাতিকে প্রভাবিত করে আসছে । অথচ বিগত একশত বছরে ডায়াবেটিস এর প্রকৃত কারনগুলো এবং ইনসুলিন আবিষ্কৃত হয়েছে ।তবে গত শতাব্দিতে ডায়াবেটিসের চিকিৎসার উদ্ভাবন গুলো কেবল ইনসুলিনে থেমে থাকে নি ; এই রোগ সম্পর্কে নতুন ধারনা বের হয়ে আসছে । নতুন ঔষধ তৈরি করা হয়েছে যা শুধু রক্তে শর্করার মাত্রাকেই ঠিক রাখে না এর সাথে হৃদপিন্ড সম্পর্কিত জটিলতাকেও মোকাবেলা করে ,যেটা ডায়াবেটিসের রোগীদের মৃত্যুর হার হ্রাস করেছে ।
যখন ডায়াবেটিসের কথা বলা হয়, আজকাল বেশিরভাগ মানুষের মনে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে সেটি হলে মৌখিক চিকিৎসা । তবে আপনি কি জানেন যে এই উপকারী ইনসুলিনটি ডায়াবেটিস রোগীদের জীবন দীর্ঘায়িত করা প্রথম সফল ঔষধ? ডায়াবেটিস ঔষদের অত্যাধুনিক অগ্রগতিতে ইনসুলিন তাদের সময় বিলাসিতায় উন্নতির জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য।
ইনসুলিন হরমোনটি অগ্ন্যাশয় থেকে নিসৃত হয় ।এটি দেহের ব্যবহারের জন্য শর্করাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । বিভিন্ন ধরণের ইনসুলিনজনিত ব্যাধির কারনে বিভিন্ন ধরণের ডায়াবেটিসের সৃষ্টি হয়ঃ-
১.ডায়াবেটিস টাইপ ১,সাধারণত এটি শিশুদের মধ্য দেখা যায় এটি তখনই ঘটে যখন দেহ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না ।
২. ডায়াবেটিস টাইপ ২,সাধারণত মাত্রাতিরিক্ত ওজনের প্রাপ্তবয়স্কের দের মধ্য দেখা যায়,এটি ঘটে যখন দেহ ঠিকমত ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না ।
৩.গর্ভকালীন ডায়াবেটিস গর্ভকালীন মহিলাদের মধ্য দেখা যায়, প্লাসেন্টাল হরমোনের কারণে ইনসুলিনের মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে শরীর তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না ।
হেপাটিক স্টেটোসিস(ফ্যাটি লিভার),মূত্রাশয়ের রোগ(রক্তে অতিরিক্ত শর্করা কিডনির ছাকন প্রক্রিয়াতে চাপ দেয়) এমনকি হৃদরোগে (রক্তে অতিরিক্ত শর্করার কারনে ধমনীতে ক্ষতি হওয়া) সমস্তধরণের ডায়াবেটিস জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে ।
ইনসুলিন আবিষ্কার এবং ডায়াবেটিসে এর ভূমিকা ছিল একটি যুগান্তকারী চিকিৎসার সেই মাত্রা যেটি কয়েকটি বৈজ্ঞানিক দলকে নোভেল প্রাইজ প্রাপ্ত করেছিল। তাদের গবেষণায়,অস্কার মিনকোভস্কি এবং জোসেফ ভন মেরিং দেখতে পেয়েছেন যেসব কুকুরদের অগ্ন্যাশয় সরিয়ে ফেলা হয়েছিলো তাদের ডায়াবেটিস হয়েছে । ফ্রেডেরিক ব্যান্টিং এবং চার্লস বেস্ট এই গবেষণার ব্যাখা দিয়েছেন , যারা ডায়াবেটিস হওয়া কুকুরদের স্যালাইন দ্রবণে অগ্ন্যাশয়ের নির্যাস দিয়ে বাচিয়ে রঅবশেষে, জেমস কলিপ এবং জন ম্যাকলেয়ড বাছুরের অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন সংগ্রহ করে তা পরিশোধন পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করেন এবং মানুষের ব্যবহারের উপযোগি করে তোলার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসেন ।
১৯২২ সালের জানুয়ারিতে এই বিজ্ঞানীদের চেষ্টার উদ্দীপনা ছিলো ১৪ বছর বয়সী লিওনার্ড থম্পসন,যার জীবনে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিলো, যিনি ডায়াবেটিসের কঠিন অবস্থায় ছিলেন এবং তার অবস্থাও গুরুতর ছিলো । পরিশোধিত ইনসুলিন প্রথম ডোজ পাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্য তার রক্তে শর্করার মাত্রা আকাশ চুম্বি ৫২০মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এরপর তা মাত্র ১২০মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারে নেমে যায় ।চাক্ষুস তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিলো,তিনি ইনসুলিন গ্রহন চালিয়ে গিয়েছেন এবং বেঁচে ছিলেন । ইনসুলিনের জন্য লিওনার্ড থম্পসনের মৃত্যুর দ্বার থেকে বেঁচে আসাটা বিশ্বজুড়ে সমস্ত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আশার আলো হয়ে উঠে ।
১৯৮২ সাল থেকে ইনসুলিনের উৎপাদনের জন্য আর প্রাণীর উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় নি । জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর অগ্রগতির ফলে ব্যাক্টেরিয়া থেকে মানব ইনসুলিন উৎপাদন সম্ভব হয়েছে । ১৯৮৫ সালে ইনসুলিন পেন আবিষ্কার করা হয়েছিলো, কার্যকারিতার অপরিহার্য্য উন্নতি, সুবিধাসমূহ, এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনের চূড়ান্ত নিশ্চয়তা ।১৯৯৭ সালের দিকে ইনসুলিনের পুরাতন আবিষ্কার গুলো মানব দেহের উপযোগী অনুয়ায়ী পরিবর্তিত হয়ে আসে । এটি ডায়াবেটিস রোগীদের এবং তাদের পরিবারের জন্য তাদের নিজস্ব দৈনিক সময়সূচী এবং ক্রিয়াকলাপ অনুসারে ইনসুলিন গ্রহণের উপযোগী করে তাদের জীবনমানকে আরও উন্নত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ইনসুলিন ১০০ বছরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বর্তমান অবস্থায় আসেছে ।
ইনসুলিন ছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উজ্জ্বল একটি চিকিৎসা সাফল্য রয়েছে, যেটি ইনসুলিন থেকেও বেশি কার্যকর এবং ঔষধটি মুখে নেওয়া যেতে পারে। এই নতুন উদ্ভাবিত ডায়াবেটিসের ঔষধটির বিভিন্ন ধরনের নিম্নলিখিত প্রভাব রয়েছে :-
- যকৃত দ্বারা রক্তে যে পরিমান শর্করা মুক্ত হয় তার পরিমাণ হ্রাস করে
- শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা দীর্ঘায়িত করে
- ইনসুলিনের উৎপাদন উদ্দীপিত করে
- শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা দীর্ঘায়িত করে
- কিডনিতে গ্লুকোজের পুন-শোষন হ্রাস করে
এইসব মৌখিক ডায়াবেটিক রোধী ঔষধগুলো ইনসুলিনের চেয়ে সঞ্চয়,পরিবহন এবং পরিচালনা করা অনেক বেশি সুবিধাজনক । বিশেষত অপেক্ষাকৃতভাবে হালকা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্য দত্তক গ্রহন দ্রুত এবং ব্যাপক আকার ধারণ করেছে ।
তবুও,ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কেবল রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার উপর দেখায় না ।মূত্রাশয়ের রোগ,লিভারের রোগ এবং হার্টের রোগ থেকেও ডায়াবেটিসের হুমকি থাকে । যার কারনে আজ ডায়াবেটিসের ঔষধ কেবল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়েই মনোনিবেশ করে না । পরিবর্তে, তারা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি সম্পূর্ণ হোস্টকে অন্যান্য সিস্টেমেটিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলি সম্বোধন করছে, নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের দ্বারা ওষুধ অনুমোদনের প্রক্রিয়া এই নতুন পদ্ধতিটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঔষধের সর্বশেষ উদ্ভাবনটি তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে যে কেবল তার খুব কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াই নয় এটি ডায়াবেটিসজনিত হার্টের রোগ থেকে অল্প সংখ্যক হাসপাতালে ভর্তি এবং কম মৃত্যুতে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করছে ।
ইনসুলিনের ১০০ বছরের ইতিহাসে যা ফুটে উঠেছে তা হলো বিজ্ঞান ও চিকিৎসায় কিছু শ্রেষ্ঠ মানুষ দ্বারা ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ সংকল্পতা এবং দক্ষতা। বুমরুনগ্রাদ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনমানের উন্নতির ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হতে পেরে অত্যান্ত গর্বিত । আমরা আমাদের রোগীর চিকিৎসার জন্য সর্বশেষ অগ্রগতি আনার জন্য অবিরাম প্রয়াস চালিয়ে যাই,যার ফলে প্রথম শতাব্দীতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সেই তরুন ছেলেকে ইনসুলিন দিয়ে পুরাতন শিখাটি বহন করে চলেছি ।
For more information please contact: