“রোগীরা যখন জানতে পারে যে তাদের ক্যান্সার আছে তখন তাদের পক্ষে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়া খুবই প্রচলিত ঘটনা। ক্যান্সার রোগীদের শারীরিক এবং মানসিক উভয়ভাবে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। যখন এরকম রোগীরা বুমরানগ্র্যাড হাসপাতাল (Bumrungrad Hospital) থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন আমাদের ফার্মাসিস্টদের জ্ঞানের গভীরতাকে কাজে লাগাতে হয় এবং রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবহার করতে হয়। আমাদেরকে যেভাবেই হোক না কেন প্রতিবন্ধকতাকে হাসিতে রূপান্তরিত করতে হয়, কারণ সঠিক মনোবল ভালো মানের ঔষধবিজ্ঞানের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজ করতে পেরে আমরা গর্বিত।” কথাগুলো বলছিলেন নিরাচর্ন কুচনথারা (Nirachorn Kuchonthara)। হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাডমিক্সচার অ্যান্ড কম্পাউন্ডিং সার্ভিসেসের সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে তিনি কীভাবে নিজ দায়িত্বের প্রতি নিজের মনোভাব এবং যত্নশীলতা প্রদর্শন করেন তা ব্যাখ্যা করতে তিনি এই কথাগুলো বলেছেন।
ঔষধবিজ্ঞানের বাইরের কিছু কথা
হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারে একজন ফার্মাসিস্টের মূল দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি স্বতন্ত্র ক্যান্সার রোগীর নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ প্রস্তুত করা এবং রোগীকে তা বুঝিয়ে দেওয়া। প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নিরাচর্ন বলেন, “ঔষধগুলোতে কিছু বিপজ্জনক পদার্থ রয়েছে, যেগুলো রোগজীবাণুমুক্ত এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অত্যন্ত দক্ষ এবং বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টদের দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। আমরা শুধুমাত্র কেমোথেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি প্রস্তুত করা ছাড়াও প্রয়োজন মাফিক অন্যান্য ইনজেকশন প্রস্তুত করে থাকি।”
“সাধারণত, প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় পর আমাদের পক্ষে রোগীদের সেবা করার সুযোগ আসে। চিকিৎসা প্রক্রিয়া প্রায়ই নির্দিষ্ট বিশেষজ্ঞ দ্বারা শুরু হয়; যেমন, পালমনোলজিস্ট, হেপাটোলজিস্ট, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট অথবা গাইনিকোলজিস্ট। রোগীর ক্যান্সার আছে তা একবার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর, তাকে একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হবে যেন রোগের বিস্তারিত শনাক্ত করা যায়। ক্যান্সার এর যথাযথ স্টেজ এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের পরে চিকিৎসার ভিন্ন ভিন্ন উপায় মূল্যায়ন করে দেখা হবে। কোন ঔষধগুলো রোগীর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হবে, সেই বিষয়ে রোগী এবং চিকিৎসক একটি আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।”

চিকিৎসক, রোগী এবং তার পরিবারের সম্পূর্ণ এবং পারস্পারিক সম্মতি চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য এবং রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে অনেক ধরণের মানসম্মত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলোর প্রত্যেকটির কার্যকারিতা এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া একেক রকম। চিকিৎসক এটা নিশ্চিত করবেন যে রোগী যেন প্রত্যেক প্রকারের চিকিৎসার ভালো এবং মন্দ উভয় দিক সম্পর্কে জানতে পারে। চিকিৎসার সময়কালে সবচেয়ে কম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াসহ রোগী যেন চিকিৎসার সাথে সাথে ভালো হয়ে সে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “চিকিৎসক এবং রোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ফার্মাসিস্ট গিয়ে রোগীকে তার বাছাইকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে পারেন। ফার্মাসিস্ট রোগীকে ওষুধের সঠিক পরিমাণ, ডোজ, ওষুধ সেবনের চক্রের সংখ্যা, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, প্রযোজ্য পরিসংখ্যান এবং জানা প্রয়োজন এমন অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে অবহিত করবেন। আমরা এটাও বিবেচনা করি যে রোগীকে প্রদত্ত খাবার এবং সম্পূরক খাদ্য কিভাবে রোগীর ওষুধগুলোর সাথে বিক্রিয়া করতে পারে এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।”
সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে এবং ওষুধ প্রেসক্রাইব করার পরে, ফার্মাসিস্টের কাজ হচ্ছে ইনফিউশন কিংবা ইনজেকশান প্রস্তুত করার আগে প্রেসক্রাইবকৃত ওষুধের ডোজ এবং শিরার মাধ্যমে গ্রহণ করার তরল সক্রিয় উপাদানসমূহের সাথে মানানসই কিনা তা যাচাই করে দেখা। কদাচিৎ ব্যবহৃত কিংবা মজুদ কম আছে এমন উপকরণের ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্ট ক্রয় ও সরবরাহ দলের সাথে পরামর্শ করে ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবেন এবং সেগুলো রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করবেন।

“আমরা কেবল প্রেসক্রিপশনের সাথে মিলিয়ে ওষুধ দিয়েই আমাদের দায়িত্ব শেষ করে দিই না। আমরা ওষুধের নিরাপত্তা প্রোফাইল এবং প্রত্যেক রোগীর স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা, যেমন রোগীর রক্তে লোহিত এবং শ্বেত রক্ত কণিকার পরিমাণ, তাদের কিডনি এবং লিভারের কার্যকারিতা ইত্যাদিও বিবেচনা করি। যদি আমরা ওষুধের পরিমাণ কমানো কিংবা বাড়ানোর প্রয়োজন দেখি তাহলে সাথে সাথে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়। তাদের কাছ থেকে অনুমোদন পেলেই শুধুমাত্র আমরা সেবনের জন্য ওষুধ তৈরি করি।” একজন ফার্মাসিস্টের নিখুঁত দায়িত্ব ব্যাখ্যা করতে নিরাচর্ন কথাগুলো বলেছেন।
ওষুধ প্রয়োগের চেয়েও বেশি কিছু
যেকোনো ক্যান্সার-চিকিৎসার ক্ষেত্রে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার পরিমাণ বিভিন্ন মাত্রার হতে পারে। একজন রোগীর নতুন কোনো চিকিৎসা-প্রণালী শুরু হলে, চিকিৎসার নতুন চক্র কিংবা সংযোজক থেরাপি শুরু হলে ফার্মাসিস্টের উচিত অবশ্যই রোগীকে জানানো। “আমাদের মধ্যে এমন অনেক ফার্মাসিস্টও আছেন যারা ওষুধের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়াদি রোগীকে বুঝিয়ে বলতে সক্ষম। যেসব আন্তর্জাতিক রোগী থাইল্যান্ডের ভাষা বুঝেন না তাদের জন্য আমরা মেডিক্যাল দোভাষীর সহায়তা নিয়ে এটা নিশ্চিত করি যেন তারা যেকোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিবরণ নিশ্চিতভাবে পেয়ে যায়। কিছু কিছু রোগীদের জন্য, পুষ্টি বিশেষজ্ঞের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন হয় যেন আবশ্যক ওষুধের প্রতিক্রিয়া কমাতে রোগীর শারীরিক শক্তি বাড়ানো যায়। রোগীর শরীর যদি ওষুধের জন্য অনুপযুক্ত হয় তবে ভালোর চেয়ে বরং খারাপ ফলাফলই বেশি দেখা যাবে।”
“কিছু কিছু রোগীর ঘুমাতে সমস্যা হয় কারণ রোগীর বমি বমি ভাব কমানোর জন্য প্রেসক্রাইব করা কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধ রোগীর ঘুমের সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য ঘুমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ সাধারণত মধ্যরাত এবং ভোর চারটার মধ্যবর্তী সময়ে শরীরে রক্ত উৎপাদিত হয়। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনো ক্যান্সার রোগী ঘুমাতে না পারে তবে তাদেরকে ওষুধ দেওয়া হবে না। এজন্যই আমরা সাধারণত রোগীকে জিজ্ঞাসা করি যে তার ঘুম ভালো হয় কিনা। প্রয়োজন হলে আমরা ঘুমানোর ওষুধ সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমরা সব ধরণের বিষয় খেয়াল করি কারণ আমরা আসলেই রোগীর প্রতি যত্নশীল।”
নিরাচর্নের 15 বছরের অভিজ্ঞতা তাকে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে ক্যান্সার চিকিৎসার প্রতিটি স্তরে সহকর্মী ও ক্যান্সার রোগীদের আস্থা অর্জন করতে সাহায্য করেছে। তার নেতৃত্বে হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাডমিক্সচার অ্যান্ড কম্পাউন্ডিং সার্ভিসেস দলের কর্মীগণ ক্যান্সার রোগীর সুস্থতার জন্য তাদের কর্তব্য এবং যত্নশীলতা সম্পর্কে বেশ সচেতন আছে। তিনি প্রতিনিয়ত কর্মীদেরকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাজ করেন। এছাড়াও, তিনি তাদেরকে প্রয়োজন হলে স্বাভাবিক কর্মঘন্টার বাইরে রোগীর তৎক্ষণাৎ এবং দীর্ঘমেয়াদী সেবার জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেন।
তারা কেন তাদের কাজ করে এই বিষয়ে আমাদের মনে করানোর জন্য নিরাচর্ন একটি বিশেষ কথা বলেছেন। “আমাদের দলের মধ্যে সবাই এই বিষয়ে অবগত থাকে যে রোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। তারা এটাও জানে যে, পরিচর্যার আওতায় থাকাকালীন সময়ে রোগী অবিরত তার শরীরে ক্যান্সার বয়ে বেড়াচ্ছে এবং ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। আমরা রোগীদের সাথে আন্তরিকতার সাথে আচরণ করি। এজন্য আমরা সব সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করি এবং আমাদের কাজের মাধ্যমে বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকি। রোগী যেন ভালো হয় সেজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করি, যেন তারা তাদের জীবনের সুসময়ে ফিরে যেতে পারে।”
For more information please contact:
Last modify: মে 14, 2025