bih.button.backtotop.text

বিষয়: অভাবনিয়র প্রতিরোধে: সংক্রামক ব্যাধির সম্মুখে আশা বাঁধি

"আশা করছি, আমার স্ত্রী অপারেশনের পর বেঁচে যাবেন। সান্তনাবাণী এখন আমাকে স্বস্তিতে রেখেছে। আমরা সবচেয়ে ভালোটাই আশা করছি।" এই শব্দের সম্ভারগুলো ছিল, জাতিসংঘের একজন কূটনৈতিক সামির শর্মার তার স্ত্রীর ব্রেস্ট ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে জীবনযুদ্ধের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার তীব্র আকুতি।
 
সামির শর্মা ভারত হতে আগত জাতিসংঘের একজন কূটনৈতিক যিনি গত ১২ বছর ধরে স্ত্রীসহকারে ও তাদের ১৫ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে থাইল্যান্ডে সংস্থিত রয়েছেন। থাইল্যান্ডে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই বসবাস করছিলেন যতদিন অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি না ঘটে।
 
"আমার সবচাইতে ভয়াবহ দুঃস্মৃতি শুরু হয় যখন আমার স্ত্রী লক্ষ্য করলেন যে একটি ক্ষুদ্র, বেদনাদায়ক পিন্ড (ল্যাম্প) তার বুকের মাঝে অনুভূত হচ্ছে। আমরা বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালে পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেই এবং নিঃসন্দেহে তারা নিশ্চিত করেন যে সেখানে ৫.৮ সে.মি. এর একটি টিউমার রয়েছে। এটি ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত ছিল," সামির শর্মা এই পীড়াদায়ক সংবাদ পাবার মুহূর্তটি ক্রমান্বয়ে বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
 
যখন প্রথম লক্ষণ অনুযায়ী সমস্যা ধরা পড়লো, তখন আমি থাইল্যান্ড ছিলাম না। যে মুহূর্তে আমার দেশের বাইরের অফিসিয়াল কাজ ফুরিয়েছে, আমি দ্রুতই আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ফিরে আসি।" বলছিলেন সামির, চিকিৎসার পদ্ধতির বিস্তারিত বর্ণনা দিতে দিতে। "প্রাথমিক পর্যায়ে অবিলম্বে কাজ শুরু করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ওর (উনার স্ত্রীর) দ্রুত অপারেশন হওয়াটা  খুবই জরুরি ছিল। সার্জনের ওর পুরো বাম পাশের স্তন অপসারণ করতে হবে, পরবর্তীতে মোট ১২ টি সেশনের রেডিওথেরাপি চলবে।"
 
চিকিৎসা ভালোভাবেই চলেছে, যদিও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যদিও, পুরো পরিবারের আশাবাণী এবং নৈতিক সমর্থন আমাদের সকল বাধা বিপত্তি পার হতে সহায়তা করেছে। এবার আসলো চিকিৎসার সর্বশেষ ধাপ; কেমোথেরাপি, যা প্রায় ১ বছর সময় নেবে (৬-৯ টি সাইকেল)। কেমোথেরাপি ছিল সবচাইতে কঠিন সময়। আমার স্ত্রী নিদারুন যন্ত্রনা পার করেছে, বিশেষত যখন তাকে দ্রুত জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে হয়েছে যখন তার শরীর ওষুধে সাড়া দিচ্ছিলনা। কিন্তু আমরা সে দিন পার করতে পেরেছি ডাক্তার এবং নার্সদের আন্তরিক সেবার সুবাদে। অবশেষে আমরা এ সুসংবাদ পেলাম যে, ও (উনার স্ত্রী) ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে মুক্ত। আমি আন্তরিকভাবে সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।" সামির মৃদু হেসে বললেন।
 

এখনো বিপদসীমার বাইরে নয়

 
সবকিছুই ভালোভাবে চলছিল, আমরা আমাদের সুখী পরিবার ফিরে পেয়েছি। কিন্তু প্রায় এক বছর পর, যখন আমি টঙ্গাতে কাজে ছিলাম, আমি সেই ভয়ানক খবরটি আবার পেলাম। রেনুর বুকে আবারো প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়েছে। ওর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো, যার দরুন আমাদের দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা জরুরি হয়ে পড়ে। আমার অবিলম্বে টঙ্গায় আমার কাজ ফেলে দ্রুত ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।" সামির তার দুঃস্বহ স্মৃতি বর্ণনা দিতে থাকলেন। " ঠিক ঐ মুহূর্ত, যখন আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম আমার স্ত্রী পুরোপুরি ক্যান্সার মুক্ত হয়ে গেছেন। মনে হচ্ছিলো ভাগ্য আমাদের সাথে পরিহাস করছে, কারণ ক্যান্সার ঠিক তখনই ফিরে এসেছে যখন আমার স্ত্রীকে একেবারে সুস্থ দেখাচ্ছিল, তবে এবারে ক্যান্সার ফুসফুসেও ছড়িয়ে গেছে। এটা ওকে তীব্রভাবে আঘাত হানে," সামির কথাগুলো বলছিলেন যখন, তখন মনে হচ্ছিলো কেউ একজন তাকে সজোরে আঘাত করেছে কিন্তু সে ব্যথার রেশ এখনো ফুরায়নি।
 
আমাদের দেখা মিললো ড. সুথীদা সুয়ানভেখো, যিনি একজন অত্যন্ত দক্ষ অনকোলজিস্ট (ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ)। শুধু তাই নয়, তিনি একজন অত্যন্ত সুহৃদ ব্যক্তিও, তিনিই আমাদের সহায়তা করেছেন ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা ছিল যে ক্যান্সার একটি মারাত্মক ও নিরাময়ের  অযোগ্য রোগ।"
 
কেমোথেরাপির সেশন করার পথটি সহজ ছিলোনা। চিকিৎসকদের জোরপূর্বক রেজিমেন্ট পাল্টাতে হচ্ছিলো। কিন্তু ওর পরিবার ও হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টারের সুদক্ষ টীম কখনোই ওর সুস্থ হয়ে ওঠার আশাকে বিনষ্ট হতে দেয়নি। " পরবর্তী ২ সপ্তাহ ওর চিকিৎসার খুবই দুরূহ সময় পার করেছে। ওর অবস্থাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাঝে সর্বদা রাখা হয় কারণ ওর সমসসার কারণে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে তার সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছিলোনা। ও অনেক বমি করছিলো, এবং ওর মেরুদণ্ডে চাপ চাপ ব্যথা অনুভব করছিলো, ও মারাত্মক দুর্ভোগের মাঝে দিন পার করছিলো। এতে আমিও অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম। এমন সময় ড. সুথিদা সিদ্ধান্ত নিলেন অপারেশন করবার।
 
অপেরেশনের জন্য অপেক্ষারত থাকাকালীন এবং অপারেশন পূর্ববর্তী পরীক্ষানিরীক্ষা চলাকালীন, ওঁর অবস্থা আরো অনিশ্চিত হয়ে ওঠে। আমি নিশ্চিন্ত বোধ করছিলাম যেহেতু ও ধক্ষ হাতের পরিচর্যায় ছিল। আমাদের ডাক্তার থেকে শুরু করে ফার্মাসিস্ট পর্যন্ত পুরো টিমের প্রতি কেবল কৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই প্রকাশ করবার নেই। সময়ে সময়ে আমি নিজেও এতটা বিক্ষিপ্ত ছিলাম যে, আমার নিজেরও ওষুধ নিতে হচ্ছিলো। কিন্তু আমি সব সময়েই সব চাইতে ভালো পরামর্শগুলো পাচ্ছিলাম " বলছিলেন সামির উল্লেখ করতে করতে যে, যখন পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল চলে আসবার পর, তার স্ত্রীর অপেরেশনের পরিকল্পনা  ওদের বাদ দিতে হয়, তার শরীরের খুবই দুর্বল অবস্থার কারণে, অপেরেশনে সফলতার হার ছিল মাত্র ১০%। ড. সুথীদা অকপটেই আমাকে বললেন, এমন শারীরিক দুর্বল পরিস্থিতিতে তিনি কখনোই কোনো অপারেশন সফল হতে দেখেননি। তিনি অপারেশন করতে মানা করে দিলেন, যেহেতু আমার স্ত্রীর অপেরেশনের ধকল সহ্য করে টিকে থাকার হার খুবই কম ছিল।
 

ধৈর্য ধারণ করে, হতাশার ঊর্ধ্বে

 
রেনু আমার কাছে পুরো পৃথিবীর শামিল। যত যাই হোক আমি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওঁর পাশে থাকবো, ওঁর মানসিক বা যাবতীয় যা যা দরকার, তা আমি ওঁর জন্য করবো। ডাক্তাররা আমাদের সাহস বজায় রাখতে যা যা প্রয়োজন সবদিক থেকে আমাদের সহায়তা করেছেন। উনারা আমাদের ধ্যান করতে এবং বিভিন্ন ধরণের মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। আমার ছেলেও যদিও সে পড়াশোনা করছে, তারপরও এর পাশাপাশি তার মাকে ভালো হয়ে উঠতে সহায়তা করছে। আমি যেভাবে বিষয়টি দেখছি, ২৫ বছরের বৈবাহিক জীবন আমাদের, সুতরাং অবশ্যই আমরা ২৫ মাসের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে, আরো শক্তিশালী ও সুঠমভাবে পার করে দেব।
 

বাকিদের জন্য আশারবাণী

 
আমাদের সর্বদা মনে রাখা উচিত যে, হাসপাতাল সব সময়ই আমাদের পাশে রয়েছে, শুধুমাত্র আমাদের প্রানপ্রিয় ভালোবাসার পাত্র যারা রোগী তাদের জন্যই না, এর পাশাপাশি আমরা যারা শুশ্রুষাকারী, আমাদেরও হাতে হাত ধরে সাহস যোগায়। যদি আমরা জানি যে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তখন এই দুর্দিনে আমাদের মনে সাহস জাগে। হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টার এ দায়িত্বটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করেছে, যেমন আমাদের ক্ষেত্রে, তারা রোগী এবং তার পরিবারকে সান্তনা ও স্বস্তিদায়ক বাণীর মাদ্ধমে নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু এটি সম্ভব হয় তখনই যখন মেডিকেল টিমের পাশাপাশি রোগী ও তার পরিবারও সহযোগমূলক যোগাযোগ স্থাপন করে। দয়া করে, আশা ছাড়বেন না, আপনাদের লড়াই চালিয়ে যান! বিশ্বাস রাখবেন যে ডাক্তাররা আপনাদের সর্বোচ্চ সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও চলার পথ বন্ধুর, যদি আমরা একে ওপরের ওপর বিশ্বাস রাখি, আমরা এ বিপর্যয়কে পরাস্ত করতে সক্ষম হবো," বললেন সামির আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে।
 
 
For more information please contact:

Related Packages

Related Health Blogs