দীর্ঘদিন ধরে, ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য সবচাইতে নিশ্চিত উপায় ছিল আক্রান্ত অংশ থেকে টিস্যু কেটে নিয়ে পরীক্ষা করবার মাধ্যমে, যা টিস্যু বায়োপসি নামেও পরিচিত। এমনকি কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে, যেমন কিছু নির্দিষ্ট ধরণের ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, যেখানে এক্স-রে অথবা এমআরআই স্ক্যানগুলোই রোগ নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট, ডাক্তারদের আরো বিস্তারিত তথ্য দরকার হয় কোন ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীর জন্য উৎকৃষ্ট তা নির্ধারণ করতে।
এটা প্রায় সময় চিকিৎসকদের জন্য অস্বস্তির উদ্রেক করে, যারা বায়োপসি করবার নির্দেশ দেবেন কি না তা নিয়ে একটি অস্বস্তিদায়ক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, কারণ ইতোমধ্যেই রোগীর অসুস্থ দুরাবস্থায় থাকা শরীরে আবার নতুন করে একটি কাটাছেঁড়ার কার্যপ্রণালী সংঘটিত করা থেকে আবার আরো নতুন জটিলতা দেখা দেবার সম্ভাবনা বেশি থেকে থাকে। এটি বিশেষত সত্য ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগীদের জন্য; সার্জারির মাধ্যমে শুধু ফুসফুস পর্যন্ত প্রবেশই যে কঠিন তা নয়, একই সাথে ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত বয়স্ক হয়ে থাকে, যাতে করে অপারেশন হতে উদ্ভূত জটিলতার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। শুধু বায়োপসিতাই যেমন দীর্ঘক্ষণ লাগতে পারে, এবং পুরো চিকিৎসার সময়কালও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই গুরুতর সমস্যাগুলো বিবেচনায় রেখেই মেডিকেল কমিউনিটিকে তাড়িত করেছে কোষে ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্ধারণ করতে নতুন প্রণালী খুঁজে বের করতে; তাদের এই সফলতার নাম "লিকুইড বায়োপসি"
লিকুইড বায়োপসি কি?
এটি সম্পাদিত হয় রোগীর থেকে ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশনের জন্য ১০ মিলিলিটার পরিমানের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবার মাধ্যমে। তবে, এই রক্তের নমুনা ব্যবহার করে এতে ক্যান্সার উপস্থিত কি না তা পরীক্ষা না করে, বরং ওই রক্তেরস্রোতে যে ক্যান্সার কোষ পরিভ্রমণ করছে তার ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। এই ডিএনএ এমন পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে পারে যা সাধারণ কোষের ডিএনএ অপেক্ষা ভিন্ন হতে পারে। এই নমুনাটি অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকারের নমুনার যথার্থ নির্ণয়ের জন্য যে অত্যন্ত সংবেদনশীল যন্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তার করবার পূর্বে একটি পরিশোধন প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার দ্রুতগামিতা যথার্থ সময়ে চিকিৎসার অগ্রগতিতে সহায়তা করে।
রোগ নির্ণয়ের এই প্রক্রিয়াটি নন-স্মল সেল লাং-ক্যান্সার [NSCLC] এর চিকিৎসায় বিশদভাবে উপকারী কারণ এটি টার্গেটেড থেরাপি সম্পাদন করবার জন্য সহায়তা করে-যা সরাসরি ক্যান্সার আক্রান্ত কোষকে লক্ষ্য করে কাজ করে এবং যার দরুন এতে তুলনামূলক কম পার্শপ্রতিক্রিয়া হয়- এবং আরো দ্রুত শনাক্ত করাও সম্ভব হয়। এই নির্দিষ্ট চিকিৎসার পদ্ধতিটিতে চিকিৎসকদের একেবারে একইধরনের যে ক্যান্সারের কোষ উপস্থিত, তার অত্যন্ত উঁচু মানের বিশদ চিত্র প্রয়োজন হয় যাতে করে সঠিক ধরণের টার্গেটেড থেরাপি নির্ণয় সম্ভবপর হয়।
ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর মেডিকেল অন্কলোজি (ESMO) এর ২০১৯ সনের সভায় বিভিন্ন স্টাডিতে লিকুইড বায়োপসির কার্যকারিতা কতটা ব্যাপক তা আরো প্রত্যক্ষভাবে প্রতীয়মান হয়। BFAST স্টাডিতে এর অমূল্য অবদান প্রমাণিত হয়, যা গবেষকদের গতানুগতিক ধারার বায়োপসিতে যেভাবে সনাক্ত করা হয় তার একই অনুপাতে ALK মিউটেশনের NSCLC এর রোগীদের সনাক্ত করতে এবং যথাযথ সময়ের মধ্যে কার্যকরী চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছেন। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও লিকুইড বায়োপসি করবার অনুমোদন দিয়েছেন যাতে করে ক্যান্সার কোষের EGFR মিউটেশন পরীক্ষা করবার মাধ্যমে NSCLC এর রোগীদের EGFR টাইরোসিন কাইনিস ইনহিবিটর্স এর মাধ্যমে চিকিৎসা করা যাবে কি না তা নির্ণয়ের জন্য।
হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার সেন্টার এই অভিনব মেডিকেল প্রযুক্তি সম্পর্কে অবগত। যার জন্য আমরা নিয়ে এসেছি থার্মো ফিশার সাইন্টিফিকস অনকমিন TM প্যান-ক্যান্সার সেল-ফ্রি অ্যাসে লিকুইড বায়োপসি প্লাটফর্ম। একই জায়গায় সম্পূর্ণ বায়োপসি প্রসেসটি সম্পাদনের মাধ্যমে, আমরা তুলনামূলক কম খরচে ও দ্রুত সময়ের মাধ্যমে ফলাফল পেয়ে যাচ্ছি। এরফলে চিকিৎসকরা কম সময়েই চিকিৎসার ফলাফল পেয়ে যান যা তাদের অতিসত্তর চিকিৎসা শুরু করতে সহায়তা করে এবং একই সাথে রোগীর খরচ কমিয়ে আন্তে সহায়তা করে। এছাড়াও, হরাইজন রিজিওনাল ক্যান্সার থাইল্যান্ডের প্রথম এবং একমাত্র সেন্টার যারা জিন ফিউশন(কিছুনির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সারের বৈশিষ্ট) করতে সক্ষম।
কিভাবে লিকুইড বায়োপসি ক্যান্সারের চিকিৎসার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে?
এমুহুর্তে, লিকুইড বায়োপসির ব্যবহার এখনও নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জামের সহায়ক হিসেবে সীমাবদ্ধ। তা সত্ত্বেও, এই পদ্ধতিটি অন্যান্য পর্যায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রস্তুতিও দিয়ে থাকে, যেমন ক্যান্সার নির্ণয়ের প্রাথমিক পর্যায়ের ডায়াগনসিস, এমনকি টিউমার তৈরী হওয়ারও পূর্বে, যেহেতু রক্তপ্রবাহের মাঝে ইতোমধ্যেই ডিএনএ মিউটেশন গোপনভাবে লুকিয়ে থাকলেও তা প্রকাশ পেয়ে যায়। একজন রোগী পুরোপুরি ক্যান্সার মুক্ত কি না তা নির্ণয়ের আরো প্রকট লক্ষণ পুনরায় ঘটার পূর্বেই লিকুইড বায়োপসির মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এখনও অনেক পথ বাকি তবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ গবেষকগণ এর আশানুরূপ সম্ভাবনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা মোটেও বাড়িয়ে বলা হবেনা যদি লিকুইড বায়োপসিকে ক্যান্সারের চিকিৎসায় একটি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন বলা হয়ে থাকে। হতে পারে তা এর দ্রুতগামী কার্যকারিতার কারণে, হতে পারে এর উপযোগিতার কারণে, অথবা রোগীর জন্য এর যৎসামান্য দুর্ভোগ যা তাদের বহন করতে বেগ পেতে হয়না-তার কারণে। এর বহুমুখিতাও এই প্রতিশ্রুতি দেয় যে আগামী এক বা দুই যুগের মধ্যে এটি এই প্রক্রিয়ার মানদণ্ড হয়ে উঠবে, কলেস্টেরল বা ব্লাড সুগার টেস্টার মতোই জাগতিকভাবে প্রচলিত হয়ে উঠবে। এটি রোগীদের যে আগাম সতর্কবার্তা প্রদান করে যার মানে দাঁড়ায় যে বিপত্তি প্রাথমিক পর্যায়ে পৌঁছোবার পূর্বেই জানান দেয় যা প্রতিরোধের জগতে চিকিৎসার বিকল্প বেছে নিতে বিশিষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম করবে।
For more information please contact:
Last modify: মে 15, 2025